ষাটের দশকের প্রথম দিকে শাহবাগ সম্প্রচার কেন্দ্রটি রেডিও পাকিস্তানের আঞ্চলিক কেন্দ্র হিসাবে প্রতিষ্ঠা করা হয়। প্রথম থেকেই কেন্দ্রটিতে চাহিদার তুলনায় স্টুডিও যন্ত্রপাতি অপ্রতুল ছিল। তাই বাংলাদেশের অভুদ্যয়ের প্রথম দিন থেকেই জাতীয় বেতার ভবনের চাহিদা তীব্রভাবে অনুভূত হয়। বাংলাদেশ বেতার দেশের সংস্কৃতি লালন-পালনের পাশাপাশি দেশের উন্নয়ন এবং জনগণের তথ্য ও বিনোদনের চাহিদা অনুযায়ী অনুষ্ঠান তৈরি ও সম্প্রচার উপযোগী একটি আধুনিক যন্ত্রপাতি সমৃদ্ধ জাতীয় বেতার ভবন নির্মাণের পরিকল্পনা করা হয়। ১৯৮৩ সালের ৩০ জুলাই থেকে শাহবাগ প্রচার ভবনের মূল কার্যক্রম ঢাকার শের-ই-বাংলা নগর জাতীয় বেতার ভবন থেকে শুরু হয়।জাতীয় বেতার ভবন জাপানের JICA এর আর্থিক ও কারিগরী সহায়তায় শের-ই-বাংলা নগরস্থ আগারগাঁয়ে ৭.৮ একর জমির উপর নির্মিত। এখানে রয়েছে আধুনিক যন্ত্রপাতি সমৃদ্ধ একটি স্টুডিও বিল্ডিং, বৈদ্যুতিক সাবস্টেশন ও কেন্দ্রীয় শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ প্লান্ট সম্বলিত একটি এনএক্স ভবন, নিরাপত্তা পোস্টসহ নিরাপত্তা বাউন্ডারী, অভ্যর্থনা বিন্ডিং,পুলিশ ব্যারাক, ক্যান্টিন ভবন ইত্যাদি। জাতীয় বেতার ভবনে রয়েছে স্বয়ংক্রিয়ভাবে পরিবর্তনশীল দুটি বিদ্যুৎ লাইন, ৩টি জেনারেটর ও একটি সিভিসিএফ সিস্টেম যার মাধ্যমে সার্বক্ষনিক বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করা হয়। একশ টনের দুটি শীতাতপ নিয়ন্ত্রন যন্ত্রের মাধ্যমে সম্পূর্ণ স্টুডিও বিল্ডিংয়ের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রন করা হয়। স্থানীয়ভাবে সম্প্রচারের জন্য রয়েছে একটি এফএম ট্রান্সমিটার সম্বলিত ওবি ভ্যান, ৪টি স্টুডিও ট্রান্সমিটার লিংক, টক স্টুডিও ৫টি, মিউজিক স্টুডিও ৩টি, নিউজ স্টুডিও ২টি, ড্রামা স্টুডিও ১টি, ১৮০ আসন বিশিষ্ট একটি অডিটিরিয়াম ও একটি কনফারেন্স রুম। প্রকৌশল, অনুষ্ঠান ও বার্তা এই তিন বিভাগের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় জাতীয় বেতার ভবনের সম্প্রচার কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। জাতীয় বেতার ভবন বাংলাদেশ বেতারের অনুষ্ঠান প্রচারের প্রাণকেন্দ্র ।এখান থেকে প্রতিদিন দুটি প্রাইম নিউজ, আবহাওয়া বার্তা, আযান, প্রতি ঘন্টার খবর, কৃষি, জনসংখ্যা, স্বাস্থাবিষয়ক, গণসচেতনামূলক বিভিন্ন অনুষ্ঠান, সরকারের উন্নয়নমূলক অনুষ্ঠান, শিক্ষার্থীদের জন্য অনুষ্ঠান, শিশুদের জন্য অনুষ্ঠান, সকল শ্রেণির শ্রোতাদের জন্য বিনোদনমূলক গান, নাটক, বিভিন্ন ধরনের ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান, শ্রোতাদের পছন্দের বিভিন্ন বিষয় যেমন ক্যারিয়ার গাইড, জনসংখ্যা, স্বাস্থ্য, আইন, ডিজিটাল বাংলাদেশ ইত্যাদি বিষয়ে শ্রোতাদের সরাসরি অংশ গ্রহনে ফোন-ইন অনুষ্ঠান ইত্যাদি জাতীয় বেতার ভবন থেকে সম্প্রচার করা হয়। বিশেষ অনুষ্ঠান যেমন মহামান্য রাষ্ট্রপতি ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর জাতির উদ্দেশ্যে প্রদত্ত ভাষণ, বিশেষ দিবস উপলক্ষে সরাসরি সম্প্রারিত অনুষ্ঠান, গুরুত্বপূর্ণ খেলার ধারাবিবরণী, জাতীয় সংসদ কার্যক্রম জাতীয় বেতার ভবন থেকে সরাসরি সম্প্রচার করা হয়। বাংলাদেশ বেতারের আঞ্চলিক কেন্দ্রসমূহ নিজস্ব অনুষ্ঠান প্রচারের মাঝে নির্দিষ্ট সময়ে জাতীয় বেতার ভবন থেকে প্রচারিত অনুষ্ঠান রিলে করে থাকে।জাতীয় বেতার ভবন থেকে ৩টি মধ্যম তরঙ্গ, ১টি ক্ষুদ্র তরঙ্গ, ৬টি এফএম ট্রান্সমিটারসহ মোট ১০টি চ্যানেলে প্রতিদিন মধ্যম তরঙ্গে ২৬ ঘন্টা ২৫ মিনিট, ক্ষুদ্র তরঙ্গে ১১ ঘন্টা ৪০ মিনিট এবং এফ এম ব্যান্ডে ৪৭ ঘন্টা ০৫ মিনিট নিয়মিত অনুষ্ঠান প্রচার করা হয়। বিশেষ দিনগুলোতে সম্প্রচার সময় বৃদ্ধি পায়।